কক্সবাজার সংবাদাতা:চট্টগ্রাম বিভাগের দক্ষিণ-পূর্বের দুই জেলা কক্সবাজার ও পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবান । সাম্প্রতিক লামা ও চকরিয়া , কক্সবাজার সদর উপজেলায় সক্রিয় হয়ে উঠেছে মোটরসাইকেল চোর সিন্ডিকেট। আশঙ্কাজনক হারে বেড়েই চলছে মোটরসাইকেল চুরির ঘটনা। গত এক মাসে পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবান জেলার লামা এবং কক্সবাজার জেলার চকরিয়া, কক্সবাজার সদর উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে বিভিন্ন মডেলের অন্তত ৮০-১২০ টি মোটরসাইকেল চুরি হয়ে যায়। চুরি হওয়া এসব মোটরসাইকেল উদ্ধারে প্রশাসনের উদ্যোগ নেই বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা। সংঘবদ্ধ চোরদের দৌরাত্ম্যে এখন অসহায় হয়ে পড়েছে মোটরসাইকেল মালিকরা।
লামা উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন ও পৌর শহরসহ আশপাশের এলাকায় একাধিক চক্র এ কাজে জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া যায়। অন্য দিকে কক্সবাজার জেলার চকরিয়া কক্সবাজার সদর উপজেলার মোটরসাইকেল মালিকরা বিভিন্ন যান্ত্রিক প্রযুক্তির ব্যবহারসহ বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করেও চুরি ঠেকাতে পারছে না। গত কয়েকদিনের অব্যবধানে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ৮০টির বেশি মোটরসাইকেল চুরি হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। গত জুলাই মাসের ৪ তারিখ রাতে উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউপি সচিস মোঃ শহীদ হোছাইনের বাড়ি থেকে তাদের তিন ভাইয়ের তিনটি মোটরসাইকেল একরাতেই চুরি হয়ে গেছে ।এছাড়াও গত এক সপ্তায় সরই ইউনিয়নের কম্পনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ইয়াছিন আলীর একটি, পৌরসভার মোঃ নেচার উদ্দিনের একটি, লামা কৃষি ব্যাংক কর্মকর্তার একটি ও ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের কুমারী বাজার এলাকার গ্রাম পুলিশ আলী আকবরের একটি ডিসকাভার মোটরসাইকেল এবং গত ১৫ আগস্ট রাতে উপজেলার আজিজ নগর থেকে আরো দুইটি মোটরসাইকেল চুরি হয়ে যায়।
এসব চুরির ঘটনায় ভুক্তভোগীরা লামা থানায় পৃথকভাবে সাধারণ ডায়েরি ও মামলা করেছে। ভুক্তভোগীরা জানান, লামা উপজেলায় আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে মোটরসাইকেল চোর চক্র। দিন দিন বেড়েই চলছে বাইক চুরির ঘটনা। বাইক চোর এ সিন্ডিকেট থেকে কেউ বাদ পড়ছে না। একাধিক সংঘবদ্ধ চোরেরা নকল চাবির সাহায্যে যেকোনো মোটরসাইকেলের তালা খুলে গাড়ি চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে।
কক্সসবাজার জেলা মোটরসাইকেল চোর সেন্ডিকেটের ৪ সদস্যসহ ৪টি গাড়ি উদ্ধার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।
জেলা পুলিশ সুপার জনাব মাসুদ হোসেন এর নির্দেশে,সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার(সদর) জনাব মুঃ সাইফুল হাসান এর দিক নির্দেশনায় ও জেলা গোয়েন্দা শাখা, কক্সবাজার এর অফিসার ইনচার্জ জনাব হুমায়ুন কবির এর তত্ত্বাবধানে পুলিশ পরিদর্শক জনাব মানস বড়ুয়ার নেতৃত্বে কক্সবাজার পৌরসভা এলাকাসহ বিভিন্ন থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করিয়া কক্সবাজার জেলার চিহ্নিত ও পেশাদার সংঘবদ্ধ মোটর সাইকেল চোর চক্রের সদস্য ০১। মোঃ সোহেল রানা (২২), পিতা-মোঃ হারুন, মাতা-নুরজাহান, সাং-কাজী পাড়া, উখিয়া পৌরসভা, ০২। মোঃ কামরুল হাসান নিজাম(২৫), পিতা-মোঃ আইয়ুব, মাতা-ছমুদা বেগম, সাং-ফলিয়া পাড়া, ০৬নং ওয়ার্ড, রাজা পালং ইউপি, উভয়থানা-উখিয়া, ০৩। আকতার মিয়া(২৬), পিতা-মৃত দুধু মিয়া, মাতা-লায়লা বেগম, সাং-ফকিরা ঘোনা, ০৮নং ওয়ার্ড, বড় মহেশখালী ইউপি, ০৪। আতিক উল্লাহ(৩২), পিতা-মৃত আবুল কালাম, মাতা-জয়নাব বেগম, সাং-মীর কাশেমের বাড়ী, কালালিয়া কাটা, ০৮নং ওয়ার্ড, হোয়ানক ইউপি, উভয় থানা-মহেশখালী, সর্বজেলা- কক্সবাজারদের গ্রেপ্তার করা হয় এবং তাহাদের হেফাজত হইতে ০৪টি চোরাই মোটর সাইকেল উদ্ধার করা হয়। ধৃত চোরদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় তাহারা কক্সবাজার জেলার চিহ্নিত ও পেশাদার সংঘবদ্ধ মোটর সাইকেল চোর। কক্সবাজার জেলা কেন্দ্রিক বিভিন্ন উপজেলায় ও জেলা শহরে তাহাদের মোটর সাইকেল চোরের একটি বিশাল সিন্ডিকেট আছে। তাহারা উক্ত সিন্ডিকেটের সাহায্যে মোটর সাইকেল চুরি করার সাথে সাথে বিভিন্ন জায়গায় পাচার করিয়া থাকে। দীর্ঘদিন ধরে কক্সবাজার পৌরসভার দক্ষিণ বাহার ছড়ার বাসিন্দা জয়নাল আবেদীনের একটি মটরসাইকেল চুরি হইলে তাহার তদন্তে ডিবির পুলিশ পরিদর্শক জনাব মানস বড়ুয়া কক্সবাজার এর বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পরিচালনা করিয়া আসামীদের গ্রেফতারসহ চুরি যাওয়া মটর সাইকেলটিসহ আরো তিনটি মটরসাইকেল উদ্বার করেন। আসামীদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু প্রক্রিয়াধীন।
অভিযোগ উঠেছে এসব বাইক চুরির ঘটনায় থানায় একাধিক ডায়েরি ও মামলা থাকলেও এসব মোটরসাইকেল উদ্ধারে স্থানীয় প্রশাসনের কোন উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। চুরি হওয়া একটি বাইকও এপর্যন্ত উদ্ধার করতে পারেনি আইন শৃঙ্খলা বাহিনী।
এবিষয়ে জানতে চাইলে লামা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, মোটরসাইকেল চুরির ঘটনায় থানায় একাধিক মামলা ও সাধারণ ডায়েরি রয়েছে, চুরি হওয়া এসব মোটরসাইকেল উদ্ধার ও চোর চক্রদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত।তাছাড়াও কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন উপজেলা সহ সদর উপজেলার তারাবনিয়ারছড়া ও রুমালিয়ারছড়া এলাকা থেকে গত এক মাসে ৬টির অধিক মোটরসাইকেল চুরি হয়েছে। একের পর এক এই ঘটনা ঘটতে থাকায় চোর ধরতে প্রশাসনের পাশাপাশি সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে মাঠে নামে জেলা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। অবশেষে কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মারুফ ইবনে হোসাইনের নেতৃত্বে মোটরসাইকেল চোর সিন্ডিকেটের প্রধান মোঃ রুবেলকে (২৬) আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। পরে কক্সবাজার সদর থানার পুলিশ আটক মো: রুবেলকে সাথে নিয়ে অভিযানে বের হয়ে আব্দুল্লাহ্ নামে আরেক মোটরসাইকেল চোরকে আটক করে।
সাম্প্রতিক সময়ে মোটরসাইকেল চুরির প্রমাণ সহ সাথে নিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয় চোর সিন্ডিকেটের প্রধান মো: রুবেলকে। রুবেল উখিয়ার কোটবাজার এলাকার মো: হারুনের ছেলে। তিনি শহরের পানবাজার সড়ক সংলগ্ন নুরপাড়ায় ভাড়া বাসায় থাকেন।
পরে কক্সবাজার সদর থানার এসআই প্রদীপ আটক মো: রুবেলকে সাথে নিয়ে অভিযান চালিয়ে মোটরসাইকেল চোর সিন্ডিকেটের আরেক সদস্য মো: আব্দুল্লাহকে (২৮) আটক করে। আব্দুল্লাহ হলেন টেকনাফের জালিয়াপালং এলাকার বাসিন্দা।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, শহরের রুমালিয়ারছড়া এলাকার নুর গার্ডেন ভবনের বাসিন্দা মোহাম্মদ জাহাঙ্গীরের (কক্স মেট্রো ল-১১-৩১১৮) মোটর সাইকেল চুরি হয়। এর আগে চুরি হয় আরো একটি মোটরসাইকেল। যার নাম্বার (কক্স মেট্রো ল-১১-৩১১০)। উত্তর তারাবনিয়ার ছড়ার জিয়াউদ্দিনের মোটরসাইকেল চুরি হয়। উত্তর তারাবনিয়ারছড়ার এডভোকেট আয়াছুর রহমানের বাড়ি থেকে মোটরসাইকেল চুরি হয়। একই সময় ওই এলাকা থেকেই এডভোকেট আয়াছের ভাই শামশুল আলমের মোটরসাইকেলও চুরি হয়।
একের পর এক এলাকায় মোটরসাইকেল চুরি হতে থাকায় প্রশাসনের পাশাপাশি চোর ধরতে মাঠে নামে জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মারুফ ইবনে হোসাইনের নেতৃত্বে একদল ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। এদিকে গতকাল মারুল ইবনে হোসাইনের নেতৃত্বে সিসিটিভি ফুটেজের চিত্র অনুযায়ী ওই এলাকায় সন্দেহজনকভাবে ঘুরাঘুরি করতে থাকা মো: রুবেলকে আটক করা হয়। পরে মো: রুবেলকে জিজ্ঞাসা করা হলে মোটরসাইকেল চুরির প্রমাণ মিলে তার বক্তব্যের মাঝে। ওই সময় মো: রুবেল প্রাথমিকভাবে জানায় চোরাই মোটরসাইকেল কোথায় রেখেছে এবং কারা তার সাথে জড়িত। ওইসময় তিনি মোটরসাইকেল ফেরত দেওয়ার কথাও জানায়। তিনি চিহ্নিত মোটরসাইকেল চোর হওয়ায় তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেয় মারুফ ইবনে হোসাইন। মো: রুবেলের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী পুলিশ তার সহযোগি আব্দুল্লাহকে আটক করে।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মারুফ ইবনে হোসাইন বলেন, অন্যায় এবং অপরাধমূলক কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করাই হচ্ছে ছাত্রলীগের কাজ। তারই ধারাবাহিকতায় দেশের প্রচলিত আইনকে শ্রদ্ধা জানিয়ে সহযোগিতার জন্য এই মোটরসাইকেল চোর সিন্ডিকেটকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকবে।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার সদর থানার এসআই জানান, মোটরসাইকেল চুরির অভিযোগে মো: রুবেল নামের একজনকে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে জেলা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। প্রাথমিকভাবে ওই যুবক মোটরসাইকেল চুরির সাথে জড়িত রয়েছে বলে প্রমান পাওয়া গেছে। তারই দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আব্দুল্লাহ নামে আরেকজনকে আটক করা হয়েছে। সেও মোটরসাইকেল চুরির সাথে জড়িত রয়েছে। পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
উল্লেখ্য, মো: রুবেল মোটরসাইকেল চুরির অভিযোগে দীর্ঘদিন কারাভোগ শেষে কিছুদিন আগে ছাড়া পায়।